অনন্ত রাধিকার বিয়ের অনুষ্ঠানে আম্বানি পরিবার।
শেষ আপডেট: 12th July 2024 16:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মুকেশ আম্বানির ছোটছেলের বিয়ে। এটা কি আর অন্য পাঁচটা বিয়ের মত হতে পারে? এশিয়ার ধনীতম ব্যক্তির পারিবারিক বিয়ের অনুষ্ঠানে চোখধাঁধানো থাকবে, এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই মাপকাঠিতেও, অনন্ত আম্বানি ও ফার্মা সংস্থা এনকোর হেলথকেয়ারের কর্ণধার বীরেন মার্চেন্টের কন্যা রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ের অনুষ্ঠানে বিলাসবৈভব কার্যত আকাশ ছুঁয়ে মহাকাশে পৌঁছে গিয়েছে। প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলা এই বিয়ের বিস্তর জাঁকজমকের পরে অবশেষে আজ মুম্বইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারে বসছে আসল বিয়ের অনুষ্ঠানের আসর। চলবে তিন দিন ধরে। মুম্বইয়ের বিমানবন্দরে অন্তত একশোটির বেশি প্রাইভেট জেট নামতে চলেছে বলে খবর। আঠারো একর জমির ওপর বানানো এই জিও সেন্টার আদতে একটি ফুটবল মাঠের চাইতে প্রায় বারো গুণ বড়, নিউ ইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং-এর দশ গুণ। তাবড় হলিউড-বলিউড তারকা, রাজনৈতিক নেতা থেকে সারা পৃথিবীর সংবাদমাধ্যম সব্বার নজর থাকবে স্রেফ এই বিয়েতেই। উপস্থিত থাকতে ইতিমধ্যেই মুম্বই পৌঁছেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু এই বিয়েই কি ভারতবর্ষের ইতিহাসের সবচেয়ে চোখধাঁধানো বিয়ে? ছোটছেলের বিয়ে দিতে মুকেশ আম্বানি ঠিক কত খরচ করছেন, এখনও জানা যায়নি। কেউ বলছেন আড়াই হাজার কোটি টাকা, কেউ বলছেন পাঁচ হাজার কোটি টাকা। ভারতের মত দেশে, যেখানে দারিদ্র্য এখনও এত বেশি, সেখানে এত জাঁক করে বিয়ে দেওয়া, তার জন্য মুম্বই শহরটার একাংশ কার্যত স্তব্ধ করে দেওয়া নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে বিস্তর। কিন্তু বিয়ে বরাবরই ভারতে বেশ হইচই করেই দেওয়া হয়। সারা পৃথিবীতে ভারতীয় বিয়ের নামডাক আছে। কিন্তু এর আগে কি ভারতের শিল্পপতিদের এরকম বিয়ের নজির আছে? একনজরে দেখল দ্য ওয়াল:
বিয়েবাড়ির জাঁকজমকে মুকেশ আম্বানির তুলনা হতে পারেন তিনিই। ছোটছেলে অনন্তের আগে মেয়ে ইশার বিয়েতেই কার্যত সাতশো কোটি টাকা খরচ করেছিলেন বলে দাবি বিভিন্ন মিডিয়াতে। ২০১৮ সালে আয়োজিত এই বিয়েতে যে লেহঙ্গাটি পরেছিলেন ইশা, স্রেফ তারই দাম ছিল নব্বই কোটি টাকা। সেটি বর্তমানে 'নীতা মুকেশ আম্বানি কালচারাল সেন্টারে' প্রদর্শিত রয়েছে। প্রত্যেক আমন্ত্রিতকে নাকি তিন লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। স্রেফ এই বিয়েতে পারফর্ম করবেন বলে রাতারাতি উড়িয়ে আনা হয়েছিল বেয়ন্সেকে। শোনা যায়, তিনি ৩৩ কোটি টাকা চার্জ করেছিলেন।
সে দিনকাল আর নেই! এখন নাকি তালপুকুরে ঘটি ডোবে না। দীর্ঘ রোগের পরে প্রয়াত হয়েছেন সুব্রত রায়। কিন্তু এককালে ভারতের তাবড় শিল্পপতিদের মধ্যে একেবারে প্রথম শাড়িতে ছিলেন সহারা গোষ্ঠীর কর্ণধার। ক্রিকেট থেকে ফুটবল, ভারতীয় ক্রীড়া জগতকে দরাজ 'স্পনসরে' ভরিয়ে দিয়েছেন সুব্রতবাবু। পূর্ববঙ্গ থেকে আসা, বিহারের বাঙালি পরিবারের সন্তান সুব্রত রায়ের ব্যবসার শুরুটা ছিল গোরক্ষপুরে। পরে লখনউতে নিজের ব্যবসার সদর দফতর বানান তিনি। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজের দুই ছেলে সুশান্ত ও সীমান্ত রায়ের একইদিনে বিয়ে দিয়েছিলেন সুব্রতবাবু। লখনউয়ের সহারা স্টেডিয়ামে প্রায় এগারো হাজার অতিথির সামনে দেদার বিলাস বৈভবের আয়োজন করা হয়েছিল। খরচ হয়েছিল, শোনা যায়, প্রায় সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকারও বেশি। তবে আরও একটা কারণে বিয়েটি স্মরণীয়। সুশান্ত-সীমান্তর সঙ্গেই একই মণ্ডপে আরও একশো জন দরিদ্র্য ছেলেমেয়ের গণবিবাহ দিয়েছিলেন সুব্রতবাবু। অতিথিদের মধ্যে ছিল দেড় হাজার গরীব মানুষ।
প্রাক্তন মন্ত্রী ও খনিশিল্পী ব্যবসায়ী গলি জনার্দন রেড্ডির মেয়ে ব্রাহ্মণী ও হায়দরাবাদের ব্যবসায়ী বিক্রম দেব রেড্ডির ছেলে রাজীব রেড্ডির বিয়ে হয়েছিল ২০১৬ সালে, বেঙ্গালুরুর প্যালেসে। আমন্ত্রিত ছিলেন ৫০ হাজারেরও বেশি অভ্যাগত। পাঁচ দিন ধরে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে আয়োজিত এই বিয়েতে এলাহি আয়োজন করা হয়েছিল। এসেছিলেন বলিউডের নামজাদা তারকারা।
ইস্পাত শিল্পপতি ও ব্রিটেনের আর্সেলর-মিত্তল সংস্থার এগজিকিউটিভ চেয়ারম্যান লক্ষ্মীনারায়ণ মিত্তলের দাদা প্রমোদ মিত্তলের মেয়ে সৃষ্টির বিয়েতে কিছু বাদ রাখেননি মিত্তলরা। ২০১৩ সালে তিন দিন ধরে স্পেনের বার্সেলোনায় চলেছিল এই বিয়ে। প্রায় ৫০০ অতিথির জন্য এলাহি ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, খরচ হয়েছিল পাঁচশো কোটি টাকারও বেশি। বার্সেলোনার ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ কাতালান আর্টে বসেছিল আসর। ঘটনাচক্রে, ২০২০ সালে প্রমোদ নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন।
লক্ষ্মী মিত্তল নিজের মেয়ের বিয়েতেও কিছু কম ধুমধাম করেননি। আর্সেলর-মিত্তলের কর্ণধার নিজের মেয়ে বণিশার বিয়ে দিয়েছিলেন প্যারিসে। প্রায় সাত দিন ধরে ফরাসি রাজধানীতে চলেছিল উৎসব। রীতিমত প্যালেস অফ ভার্সাইতে আয়োজন করা হয়েছিল অনুষ্ঠানের। এসেছিলেন শাহরুখ খান থেকে ঐশ্বর্যা রাই-সহ অনেকে। রীতিমত প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে বর্ণাঢ্য আতসবাজির খেলা চলেছিল এই উপলক্ষ্যে। ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত এই বিয়ের মণ্ডপ সজ্জার জন্য মুম্বই থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল শিল্পীদের। একটি নাটক লিখে দিয়েছিলেন জাভেদ আখতার। আম্বানিদের এই বিয়ের আগে অনেকে বিয়ের জাঁক বলতে আজও লক্ষ্মী মিত্তলের মেয়ের বিয়েকেই মনে রাখেন।