শেষ আপডেট: 16th February 2025 09:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রচলিত ধারণা হল, মহা কুম্ভ মেলায় গিয়ে নদীর নির্দিষ্ট সঙ্গম স্থলে স্নান করলে 'মোক্ষ' লাভ করা যায়। অমৃত কুম্ভে ডুব দিলে নাকি জীবনের সমস্ত পাপ দুঃখ গ্লানি ধুয়ে মুছে যায়। স্বর্গপ্রাপ্তি হয় পরজীবনে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেই ধারণাই বয়ে চলেছে প্রয়াগরাজে ত্রিবেণীকে সঙ্গমকে ঘিরে। তার সঙ্গে এবার জুড়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষের অতিশয় আগ্রহ ও হুজুগ। তাই অমৃতস্নানের জন্য লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগম হয় মহা কুম্ভমেলায়। মকর সংক্রান্তির ঠিক একদিন আগে, ১৩ই জানুয়ারি মেলা শুরু হয়েছে। চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি, মহাশিবরাত্রি পর্যন্ত।
মেলা শুরুর প্রথম দিনেই প্রায় ৬০ লাখ মানুষ সঙ্গমস্থলে স্নান করেছেন বলে জানানো হয়েছিল মেলা কর্তৃপক্ষের তরফে। কিন্তু সেই তুলনায় ব্যবস্থাপনা কি আদৌ ছিল বা রয়েছে প্রয়াগে? যত দিন যাচ্ছে, ততই চরম বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে মহা কুম্ভে। তার জেরে এবার শুরু থেকেই যেন মৃত্যু মিছিল চলছে।
শুরুটা হয়েছিল চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে। মহা কুম্ভ মেলা প্রাঙ্গণে ভয়াবহ আগুন লেগেছিল। সেক্টর ১৯- এর বিশাল অংশ জুড়ে আগুনের গ্রাসে পুড়ে ছাই হয়ে যায় অসংখ্য তাঁবু। সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে নাজেহাল হতে হয় দমকল বাহিনীকেও। একের পর এক তাঁবুতে নিমেষে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আড়াইশোর বেশি তাঁবুর ভিতরে থাকা সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাঁবু থেকে নিরাপদে সকল বাসিন্দাদের সরানো সম্ভব হয়েছিল। কারও প্রাণহানি হয়নি।
তারপরের ঘটনা ২৯ জানুয়ারি, মৌনী অমাবস্যার দিন মহাকুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে ৩০ জন প্রাণ হারান। গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতী- তিন নদীর সঙ্গমে মৌনী অমাবস্যায় শাহী স্নানের সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলেও যোগী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও এই ভয়াবহ ঘটনা সামনে আসে।
তারপরেই ১২ ফেব্রুয়ারি, মহাকুম্ভে মৌনী অমাবস্যায় পুণ্যস্নান করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হওয়া ৩০ জনের প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বাজেট অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কুম্ভে মৃত্যু নিয়ে বলেন, ‘কুম্ভে এত লোক মারা গেলেন, আপনাদের কাছে খবরই নেই। ২৪ ঘণ্টা তো সেখানে সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতেই দেয়নি। এমনকী ইন্টারনেটও ব্লক করে রেখেছিল ওরা। মহাকুম্ভে এত মানুষের মৃত্যু হলো, কতগুলি কমিশন গিয়েছে? কটা কমিটি গিয়েছে? এখানে কিছু হলেই রিপোর্ট চায়, কমিটি পাঠায়। অথচ কত মানুষ মারা গিয়েছেন কুম্ভে। আমি একটা ভিডিও দেখলাম, লক্ষ লক্ষ জুতো গাড়িতে তুলছিল। জুতো তোলার সময়ে বলছিল, ওই দেখো বডি নিয়ে আসছে। কত ডেডবডি যে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে, আমি তো জানি না। তবে একটাই জিনিস জানি, কোভিডেও যখন মানুষ মারা গিয়েছিলেন, মৃতদেহ নদীতে পাওয়া গিয়েছিল।’ সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে করা একাধিক অভিযোগের রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটে যায় আরও এক ঘটনা!
এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি, মির্জাপুর-প্রয়াগরাজ মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলায় অংশ নিতে যাওয়া ছত্তিশগড়ের ১০ জন তীর্থযাত্রী এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। আনুমানিক মধ্যরাতে মির্জাপুর-প্রয়াগরাজ মহাসড়কে তাঁদের বহনকারী একটি বোলেরো গাড়ির সঙ্গে একটি বাসের সংঘর্ষ হলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এমনটাই জানা যায়। এতে আরও ১৯ জন আহত হয়েছেন বলে ইন্ডিয়া টুডে-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল। মৃত তীর্থযাত্রীরা সকলেই ছত্তিশগড়ের কোরবা জেলার বাসিন্দা ছিলেন এবং তারা পবিত্র স্নানের উদ্দেশ্যে সঙ্গমের পথে রওনা হয়েছিলেন।
একদিন যেতে না যেতেই ১৫ ফেব্রুয়ারি মাঝ রাত ১১টায় নিউ দিল্লি স্টেশনে ঘটে গেল ভয়াবহ ঘটনা। শনিবার রাতে কুম্ভগামী ট্রেনে ওঠার সময় চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, যার ফলে প্রাণ হারান অন্তত ১৮ জন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ৯ জন মহিলা, ৫ শিশু ও ৪ জন পুরুষ। আহত হয়েছেন বহু যাত্রী। রেলের ডিসিপি কেপিএস মালহোত্রা জানিয়েছেন, 'দু'টি ট্রেন দেরিতে থাকায় বিপুল যাত্রী ভিড় জমায়। মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। বিশেষ ট্রেনের ঘোষণা হতেই সবাই একসঙ্গে ছুটতে থাকেন, যার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।'