শেষ আপডেট: 30th September 2024 19:40
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপে আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের ২৬ বছরের তরুণী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আন্না সেবাস্তিয়ান পিরায়িলের মৃত্যুর পর এবার ফের কাঠগড়ায় আরও এক বেসরকারি সংস্থা। সেখানকারই ৪২ বছরের কর্মী আত্মহত্যা করলেন 'উচ্চ কর্তৃপক্ষের চাপে'। তাঁর লেখা সুইসাইড নোটে এমনই অভিযোগ করে গিয়েছেন তিনি। তরুণ সাক্সেনা নামে ওই যুবক উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসির এরিয়া ম্যানেজার ছিলেন।
সুইসাইড নোটে তরুণ লিখেছেন, কর্মক্ষেত্রে তাঁর সিনিয়ররা টার্গেট পূরণ করার জন্য অনবরত চাপ সৃষ্টি করছিলেন গত দু'মাস ধরে। টার্গেট সম্পূর্ণ না করতে পারলে তাঁর বেতন কাটা যাবে বলেও মানসিক চাপ দেওয়া হচ্ছিল। যদিও তাঁর অভিযোগ সম্পর্কে কোম্পানির তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
সোমবার সকালে তরুণকে তাঁর বাড়িতে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাঁর কাজের লোক প্রথম দেহটি দেখতে পান। তিনি তাঁর স্ত্রী মেঘা এবং দুই সন্তান যথার্থ এবং পিউকে আরেকটি ঘরে বন্ধ করে রাখেন। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আত্মহত্যার আগে স্ত্রীকে একটি পাঁচপাতার চিঠি লিখে রেখে গিয়েছেন তরুণ। সেখানে তিনি বলেছেন, তাঁর উপর সাংঘাতিক চাপের কথা।
তিনি লিখেছেন, বহু চেষ্টা করেও তিনি কোম্পানির দেওয়া টার্গেট সম্পূর্ণ করতে পারেননি। তাঁকে ওই এলাকা থেকে কোম্পানির দেওয়া ঋণের মাসিক কিস্তির টাকা পুনরুদ্ধার করার কাজ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তিনি সম্পূর্ণ টাকা আদায় করতে পারেননি। তরুণ লিখেছেন, তাঁর ভয় ছিল এ কারণে হয়তো তাঁর চাকরি চলে যাবে। সিনিয়ররা তাঁকে বারবার এনিয়ে অপদস্থ করছিলেন। তাঁর ভাষায়, আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। আমি ভাবারও শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। তাই চলে যাচ্ছি, লিখেছেন তরুণ সাক্সেনা।
তরুণ লিখেছেন, তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা মাসিক কিস্তির বকেয়া টাকা মেটাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি টাকা আদায়ে সমস্যা হচ্ছে বলে বারবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন কিন্তু তাঁরা কোনও কথাই শুনতে রাজি হননি বলে তরুণের অভিযোগ। স্ত্রীকে লেখা সুইসাইড নোটে তরুণ আরও লিখেছেন, গত ৪৫ দিন ধরে আমি ঘুমোতে পারিনি। কোনওরকমে দুমুঠো খেয়েছি। আমি ভীষণ চাপের মুখে ছিলাম। যে কোনও মূল্যে টার্গেট কমপ্লিট করো, নয়তো চাকরি ছেড়ে দাও-- হুমকি দিচ্ছিলেন সিনিয়ররা।
পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে তরুণ আরও জানিয়ে গিয়েছেন, তিনি এ বছরের মতো বাচ্চাদের স্কুলের বেতন মিটিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রী যেন তাঁকে ক্ষমা করেন। মা-বাবা সহ সকলকে লিখেছেন, আমি এই পথ নিতে বাধ্য হচ্ছি। বাড়ির উপরের তলা যাতে সম্পূর্ণ হয় সেই শেষ ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন। বাচ্চাদের বলেছেন, ভাল করে পড়াশোনো কোরো। মায়ের উপর খেয়াল রেখো। আত্মীয়দের উদ্দেশে লিখেছেন, বিমার টাকা পেতে তাঁরা যেন মেঘাকে সাহায্য করেন। সিনিয়রদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাতেও বলেছেন তরুণ। তাঁরাই তাঁর মৃত্যুর কারণ বলে জানিয়েছেন তিনি।
তরুণের এক আত্মীয় গৌরব সাক্সেনা জানান, এদিন ভোর ৬টার সময় একটি ভিডিও কনফারেন্সে তরুণকে টার্গেটের ব্যাপারে ভয় দেখান সিনিয়ররা। তিনি আর কাজ করতে পারবেন না এবং তাঁকে বরখাস্ত করা হবে বলেও ভয় দেখানো হয়। এর পরেই ঘটে মর্মান্তিক কাণ্ড।