প্রতীকী ছবি
শেষ আপডেট: 4 May 2025 14:45
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মাত্র ৩ বছর বয়সে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়েছিল ভিয়ানা জৈন (Viyana Jain)। মৃত্যু নিশ্চিত জেনে তাকে 'সান্থারা' নামের জৈন ধর্মীয় অনুশীলনে দীক্ষিত করে পরিবার। 'মৃত্যু পর্যন্ত স্বেচ্ছায় উপবাস' করে পেটে খিদে নিয়েই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল ছোট্ট ভিয়ানা (3 Year Old 'Fasts To Death' In Jain Ritual)।
মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা পিয়ুশ জৈন ও বর্ষা জৈন পেশায় আইটি কর্মী। ভিয়ানা ছিল তাঁদের একমাত্র সন্তান। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে শিশুটির। মুম্বইয়ে দীর্ঘ চিকিৎসা চলে তার। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। কিন্তু গত মার্চে আবারও অসুস্থ হয় ভিয়ানা। সেইসময়েই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, ভিয়ানার সুস্থ হওয়ার আর কোনও আশা নেই।
মেয়ের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে ভেঙে পড়ে জৈন দম্পতি। গত ২১ মার্চ পরিবারের পরামর্শে ইন্দোরে ধর্মগুরু রাজেশ মুনি মহারাজের শরনাপন্ন হয়। তিনি বলেন, শিশুটির মৃত্যু আসন্ন। তাকে 'সান্থারা' অনুশীলনে দীক্ষিত করার পরামর্শ দেন (3 Year Old 'Fasts To Death' In Jain Ritual)।
বর্ষা জৈন বলেন, "ধর্মগুরু আমাদের 'সান্থারা' বিষয়টি বুঝিয়ে দেন। তাঁর কথায় অনুপ্রাণিত হয়েই আমাদের মেয়েকে দীক্ষিত করি। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই ভিয়ানার মৃত্যু হয়।" পিয়ুশ জৈন বলেন, "আমরা ভিয়ানার 'সান্থারা' করানোর উদ্দেশ্যে যাইনি, কিন্তু গুরুজি বলেছিলেন যে তার অবস্থা সংকটজনক এবং তিনিই এই অনুশীলন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাই পরিবারের সকলেই রাজি হয়েছিলাম।" অনুমান করা হচ্ছে, বছর ৩-এর শিশুটির শরীর অত্যন্ত খারাপ থাকার কারণে 'সান্থারা' শেষ হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়েছে।
'সান্থারা' (Santhara) অনুশীলনে দীক্ষিত সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে 'গোল্ডেন বুক অফ ওয়ার্ল্ডস'-এ নাম উঠেছে ভিয়ানার। এরপরই এই ঘটনাটি সকলের সামনে আসে। এনিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, তিন বছরের একটি শিশু কি সত্যিই মৃত্যুর অর্থ বুঝতে পারে? আর যদি তা না হয়, তাহলে তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কার আছে? সূত্রে খবর, ধর্মগুরু রাজেশ মুনি মহারাজ দাবি করেছেন, 'তিন বছরের ভিয়ানার ধর্মীয় বোধগম্যতা
ছিল একজন ৫০ বছরের মানুষের সমান।'
যদিও সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) বিচারপতি রীতেশ আগরওয়াল বলেন, "একজন নাবালকের জীবন ও মৃত্যুর সিদ্ধান্ত তার বাবা-মায়ের হাতেও নেই। এটি একটি গুরুতর আইনি ও সাংবিধানিক প্রশ্ন উত্থাপন করে: 'সান্তরা' কি এমন একজন নাবালকের ক্ষেত্রে করা যেতে পারে যিনি আইনি বা আবেগগতভাবে মৃত্যুকে বুঝতে পারেন না?"
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রিতেশ আগরওয়াল বলেন, "একজন নাবালকের জীবন ও মৃত্যুর সিদ্ধান্ত তার বাবা-মায়ের হাতেও নেই। এটি একটি গুরুতর আইনি ও সাংবিধানিক প্রশ্ন তুলে ধরে। 'সান্থারা' কি এমন একজন শিশুর ক্ষেত্রে করা যেতে পারে যে আইনি বা আবেগগতভাবে মৃত্যুকে বুঝতেই পারবে না?" তিনি আরও বলেন, "২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ ধর্মের স্বাধীনতা প্রদান করে, কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এমনকি ধর্মীয় অনুশীলনও একজন নাবালকের জীবনের আইনি অধিকারকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।"