শেষ আপডেট: 30th January 2025 17:45
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভে স্নান সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়। বুধবার ভোর রাতে মহাকুম্ভে পুণ্য স্নান করতে গিয়ে পদপিষ্ট হন প্রায় ৩০ জন। গুরুতর আহত একাধিক। তদন্ত করে দেখা যায় মূল ভিড়টি তৈরি হয়েছিল মহাকুম্ভ মেলার সবচেয়ে পবিত্র স্থান ‘সঙ্গম নাক’-এ (Sangam Nose)। মনে করা হচ্ছিল গোটা বিপর্যয়টি সেখানেই হয়েছে। কিন্তু গ্রাউন্ড রিপোর্ট বলছে সঙ্গম নাকে পদপিষ্টের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর আরেকটি স্থানে একই ঘটনা ঘটে। সেখানেও পদপিষ্ট হয়ে অনেকে মারা যান।
বুধবার দিনভর উদ্ধারকাজ ও ঘটনার কাটাছেঁড়া চলে। একাধিক তথ্য হাতে আসে। প্রশ্ন পাল্টা প্রশ্ন ও রাজনৈতিক চাপানউতরও বাদ যায়নি। অনেকে ব্যবস্থাপনা নিয়েও আঙুল তোলেন সরকারের দিকে। তবে, রাত পেরিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল হতেই সামনে আসে একদম নতুন এই তথ্য। জানা যায়, সঙ্গম নাক বা সঙ্গম নোস ছাড়াও ঝুসি নামের একটি জায়গাতে আরেকটি পদপিষ্টের ঘটনা হয়। সেখানেও প্রাণহানি ঘটে।
ঝুসি প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভের মূল জায়গা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে। তাহলে কেন সামনে এল না এই জায়গার নাম। কেন শুধু সঙ্গম নাকের কথাই প্রচার হল? অনেকেই ঝুসির কথা জানার পর এই প্রসঙ্গ তুলছেন। প্রশাসনের দাবি, ঝুসির কথা চেপে যাওয়া হয়েছিল যাতে উপস্থিত পুণ্যার্থীদের মধ্যে কোনওরকম প্যানিক না তৈরি হয়। সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ বলে জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে ঝুসির ওই জায়গায় পৌঁছয় সাংবাদিকরা। তাঁদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ভয়াবহ ফুটেজ। কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে জুতো, জামা কাপড়ের অংশ। কোথাও পড়ে রয়েছে ব্যাগ, গামছা। সেগুলিই পরিষ্কার করার কাজ করছে কয়েকটি ট্রাক্টর। স্থনীয়রা জানান, ধুপধাপ পড়ে যেতে দেখেছেন বেশ কয়েকজনকে। দেখেছেন টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতেও। পরে সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে দেহ। সে চিত্রও এড়িয়ে যায়নি স্থানীয়দের চোখ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সঙ্গম নাকে দুর্ঘটনাটি রাত ১.৩০ নাগাদ হয়। ঝুসিতে হয় ভোর ৫.৫৫ নাগাদ। কিন্তু ঝুসির ঘটনাটি সামনে আসেনি। ঘটনার পর অনেকেই বলছেন, অসহায় লাগছিল। কেউ উদ্ধার করতে আসেনি। কেউ ছিলই না সাহায্যের জন্য। অনেকের দাবি, ল্যাপটপ ও আইফোন সহ একাধিক জিনিসও চুরি হয় এলাকা থেকে।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বুধবার মাঝ রাতে যখন এমন ঘটনা হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় রাস্তা। ঘিরে দেওয়া হয় এলাকা। অনেক পুণ্যার্থী ক্লান্তির জেরে রাস্তাতেই ঘুমিয়ে পড়েন। কিছু পুণ্যার্থী ঝুসির দিকের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাতে ভিড় বাড়তে থাকে ও পদপিষ্টের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ঝুসিতে যখন এই ঘটনা হয়, কোনও সাংবাদিক বা কেউ উপস্থিত ছিল না। ফলে সবটাই ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়।
ঝুসিতে হলদিরামের কিয়স্কে থাকা এক মহিলা জানান, এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা লুট হয়েছে এই আবহে। তাঁর চোখের সামনেই টেন্টে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। বলেন, 'বয়স্কদের টেনে টেনে বের করা হচ্ছিল। দেহগুলি বেরিয়ে আসছিল কাপড় জামা থেকে। মাটি মাখা অবস্থায়।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, 'অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত ছিল না উদ্ধার করার মতো। কিচ্ছু ছিল না এলাকায়।'
যদিও এনিয়ে সরকারের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।