বিজেপির পাঞ্জাব শাখার দায়িত্বে ছিলেন রুপানি। ৫ জুন স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ১৯ জুন লুধিয়ানা ওয়েস্ট বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রচারের জন্য সফর পিছিয়ে দেন।
বিজয় রুপানি
শেষ আপডেট: 13 June 2025 05:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আমাদের প্রত্যেকেরই কম-বেশি লাকি নম্বর থাকে, লাকি কালার থাকে বা লাকি জামা কাপড়। যেকোনও শুভ কাজে বা ভাল কিছুতে সেই সব জিনিস ব্যবহারের চেষ্টা হয়। গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানিও এমনই ছিলেন। তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, '১২০৬' ছিল তাঁর কাছে সৌভাগ্যের সমান। কিন্তু বিধাতার কী অদ্ভুত খেলা। ১২০৬-তেই লন্ডনগামী বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল তাঁর। পৌঁছন হল না গন্তব্যে।
প্রিয় সংখ্যার প্রতি রুপানির বিশ্বাস ছিল অবিচল। স্কুটার থেকে শুরু করে সব গাড়ির নম্বর, সবেতেই থাকত ‘১২০৬।’ অনেকে বলেন, ওটাই নাকি ছিল রুপানির সবচেয়ে লাকি নম্বর। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ছায়াসঙ্গী। সেই নম্বরই এ দিন হয়ে উঠল বিদায়ের তারিখও।
বিজেপির পাঞ্জাব শাখার দায়িত্বে ছিলেন রুপানি। ৫ জুন স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ১৯ জুন লুধিয়ানা ওয়েস্ট বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রচারের জন্য সফর পিছিয়ে দেন। ঠিক হয় ১২ জুনে যাবেন। আর সেখানেই লেখা ছিল তাঁর নিয়তি। পাঞ্জাব বিজেপি সভাপতি সুনীল জাখর জানান, এই ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ভাগ্য কখন কীভাবে কাকে কোথায় নিয়ে যায়, তা কেউ বলতে পারে না। নির্বাচনী প্রচারের জন্যই তিনি সফর পিছিয়ে দিয়েছিলেন। আর তাতেই এমন ভয়ঙ্কর পরিণতি! ভাবা যায় না।
গুজরাতের রাজকোট শহর, রুপানির রাজনৈতিক ক্ষেত্র। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করেছেন তিনি। বহু কাজ করেছেন, বহু মানুষের ভালবাসা কুড়িয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবেও অনেকের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিল। রাজকোট আজ স্বভাবতই শোকস্তব্ধ।
রাজনীতির বাইরেও তিনি ছিলেন পাড়ার পরিচিত মুখ, সহজপ্রাপ্য এক মানুষ। তাঁর প্রতিবেশী সঞ্জয় মেহতা বললেন, 'তিনি অবশ্যই একজন বড় নেতা ছিলেন। কিন্তু থাকতেন একদম আমাদের মতো করেই। নাম, পদ, কিছুতেই তাঁর ব্যবহার বদলায়নি। আমাদের কাছে ছিলেন বিজয়ভাই— বন্ধু, আশ্রয়, ভরসা।'
বিজেপির তরফে ইতিমধ্যেই রুপানির মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। ‘এক বড় ক্ষতি’ বলে উল্লেখ করেছে দল। উদ্ধারকারী সংস্থাও জানায়, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। তাঁর ভাইপো মেহুল রুপানি বলেন, 'এই দুঃসংবাদে গোটা পরিবার ভেঙে পড়েছে। আন্টি (রুপানির স্ত্রী অঞ্জলি) এবং তাঁর মেয়ে লন্ডন থেকে ফিরছেন। আমেরিকায় থাকা অন্যান্য আত্মীয়রাও রওনা হয়েছেন। দেহ হস্তান্তরের সরকারি প্রক্রিয়া আমরা অনুসরণ করব। পরিবারের কেউই এখনও ঠিকভাবে নিজেকে সামলানোর অবস্থায় নেই।'
রুপানির ব্যক্তিগত সহকারী শৈলেশ মণ্ডলিয়া বলেন, 'বিমানবন্দরে তাঁকে নামিয়ে দিয়েছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর পেলাম— দুর্ঘটনা ঘটেছে।'
উল্লেখ্য, ১৯৫৬ সালের ২ অগস্ট, মায়ানমারের ইয়াঙ্গনে এক জৈন পরিবারে জন্ম বিজয় রুপানির। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাঁর পরিবার ১৯৬০ সালে চলে আসে গুজরাতের রাজকোটে। সেই রাজকোটই আজ তাঁকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ।